নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বছরের পর বছর ধরে ভাসমান ক্ষেতে (ধাপ) সবজির চারা উৎপাদন করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন বরিশাল ও পিরোজপুরের কৃষকরা। তবে এবার মহামারি করোনা ও বন্যার কারণে চারার বাজার অনেকটাই মন্দা যাচ্ছে। ফলে লোকসানের আশঙ্কা করছেন চারা চাষিরা। এদিকে পাইকাররা বলছেন, ফসলি জমিসহ দেশের নি¤œাঞ্চলগুলো থেকে পানি সরে গেলে বাজার ঘুরবে। বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার বিশারকান্দি ইউনিয়নের উমারের পাড় গ্রাম থেকে সবজির চারা কেনেন এমন একজন পাইকার মো. শহিদ। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, গোটা বিশারকান্দি ও পিরোজপুর নাজিরপুরের বৃহৎ এলাকাজুড়ে বর্ষার সময় ফসলি জমি পানির নিচে ডুবে থাকে। আর এ সময়টাতে শ্যাওলা, ফ্যানা ও কচুরিপানা দিয়ে ভাসমান ক্ষেত (ধাপ) তৈরি করা হয়। যা ডুবে থাকা ফসলি জমির ওপর রেখে সবজির চারা উৎপাদন করেন স্থানীয় কৃষকরা। এ অঞ্চলে প্রতিটি ধাপে প্রচুর পরিমাণ সবজির চারা উৎপাদন করা হয়। উৎপাদিত সে সব চারা বরিশালের পিরোজপুর, পটুয়াখালী, ফরিদপুর, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, চাঁদপুর, বাগেরহাট ও চট্টগ্রামে নিয়ে বিক্রি করা হয়।
তবে এবার বন্যার কারণে সবজির চারার বাজার এখনো মন্দা। সে সঙ্গে মহামারি করোনাকালে ক্রেতাদের সংখ্যাও কমে যাওয়ায় বিগত সময় থেকে এবারে চারার দর অনেকটাই কম। তিনি আরও বলেন, যেখানে গত বছর বিভিন্ন সবজির চারা ৮-১০ টাকায় বিক্রি করেছি, এবার সেখানে তিন-পাঁচ টাকাতেও বিক্রি করতে হচ্ছে। এক্ষেত্রে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি অর্থাৎ জমি থেকে পানি নেমে গেলে বাজার পরিস্থিতি ঘুরে যাবে। অপর পাইকার আ. খালেক বাংলানিউজকে বলেন, খুচরো বাজারে চারার চাহিদা কম থাকায় দর অনেকটাই কম। বর্তমানে তাই চাষিদেরও ভালো দর দিতে পারছিনা। আর এভাবে উৎপাদিত চারা তিন-চার দিনের বেশি সময় টিকিয়ে রাখা সম্ভব না হওয়ায়, ক্রেতাদের আগ্রহ বুঝেই চাষিদের কাছ থেকে সংগ্রহের পরিমাণও কমিয়ে দিয়েছি।
উমারের পাড় গ্রামের চাষি সেলিম হাওলাদার বাংলানিউজকে বলেন, গতবছর লাউ, শিম, বেগুন, পেপে, কুমড়া, করলা, শষা, বরবটি, টমেটো, ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা, কাচা ও বোম্বাই মরিচের চারা শ’ প্রতি ৩ থেকে ৫ শত টাকায় বিক্রি করেছি। আর এবারে তা কমে অর্ধেকের কাছাকাছি গিয়ে ঠেকেছে। তুলাতলা এলাকার কৃষক শামসুল হক বাংলানিউজকে বলেন, মহামারি করোনার কারণে এবার স্থানীয় পাইকার ছাড়া দূরের পাইকারদের তেমন একটা দেখা মিলছে না বিশারকান্দিতে। দূরের পাইকার না থাকায় বাজার স্থানীয় পাইকারদের নিয়ন্ত্রণে, ফলে লোকসান ঠেকাতে তারা যে দর দিচ্ছে তাতেই চারা বিক্রি করছেন কৃষকরা। রাসেল নামে অপর এক কৃষক বাংলানিউজকে বলেন, মৌসুমে একটি ধাপ থেকে ৩-৫ বার চারা উৎপাদনের চেষ্টা থাকে কৃষকের, সে ক্ষেত্রে ভাসমান ক্ষেতে (ধাপ) নির্ধারিত সময়ের পর চারাগাছ রাখাটাও বিপদ।
Leave a Reply